অ্যামাইলয়ডোসিস (Amyloidosis)

অ্যামাইলয়ডোসিস (Amyloidosis)












বর্ণনা

অ্যামাইলয়ডোসিস এক ধরনের বিরল রোগ যা শরীরের বিভিন্ন অঙ্গে অ্যামাইলয়ড নামক তরল পদার্থ জমার কারণে হয়ে থাকে। অ্যামাইলয়ড একটি অস্বাভাবিক প্রোটিন। এটি সাধারনত আপনার অস্থি মজ্জায় উৎপন্ন হয় এবং এই প্রোটিন যে কোনো টিস্যু অথবা অঙ্গে জমাট বাঁধে।  
মানুষের বিভিন্ন অঙ্গ অ্যামাইলয়ডোসিস দ্বারা আক্রান্ত হতে পারে। হৃৎপিন্ড, কিডনি, লিভার, স্নায়ুতন্ত্র এবং পরিপাক নালীতে ঘনঘন এই সমস্যা হয়ে থাকে। এই সমস্যা মারাত্মক আকার ধারন করলে শরীরের অঙ্গ ক্ষতিগ্রস্থ হয়। চিকিৎসার মাধ্যমে এই রোগের লক্ষন এবং অ্যামাইলয়ড প্রোটিনের উৎপাদন নিয়ন্ত্রন করা সম্ভব।                                                                                                                        

কারণ

সাধারনত শরীরের বিভিন্ন অঙ্গে অ্যামাইলয়ড নামক তরল পদার্থ জমার কারণে অ্যামাইলয়ডোসিস হয়ে থাকে। এই তরল পদার্থ অস্থি মজ্জায় উৎপন্ন হয় এবং এই প্রোটিন যে কোনো টিস্যু অথবা অঙ্গে জমাট বাঁধে। অ্যামাইলয়ডোসিসের কারণগুলো এই রোগের ধরণের উপর নির্ভর করে।  
এই সমস্যাটি বিভিন্ন ধরনের হয়ে থাকে। যেমনঃ
  • ইমুনোগ্লোবুলিন লাইট চেইন (এএল) অ্যামাইলয়ডোসিসের কারণে হৃৎপিন্ড, কিডনি, ত্বক, নার্ভ/স্নায়ু এবং লিভারে সমস্যা দেখা দেয়। পূর্বে এই রোগটি প্রাইমারি অ্যামাইলয়ডোসিস নামে পরিচিত ছিল। অস্থি মজ্জায় অস্বাভাবিক অ্যান্টিবডি উৎপন্ন হওয়ার ফলে এই রোগটি হয়ে থাকে। এই অ্যান্টিবডি গুলো আপনার শরীরের বিভিন্ন টিস্যুতে অ্যামাইলয়ডের মত জমা হতে থাকে। যার ফলে শরীরের স্বাভাবিক কার্যক্রম ব্যহত হয়।                                                                                  
  • অ্যামাইলয়ডোসিসের কারণে সাধারনত কিডনিতে সমস্যা দেখা দেয়। তবে এই রোগের ফলে মাঝে মাঝে পরিপাকনালী, লিভার অথবা হৃৎপিন্ডে সমস্যা দেখা দিতে পারে। পূর্বে এই রোগটি সেকেন্ডারি অ্যামাইলয়ডোসিস নামে পরিচিত ছিল। এই রোগটি ক্রনিক ইনফেকশন অথবা ইনফ্লামেটরি ডিজিজ যেমনঃ রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিস অথবা ইনফ্লামেটরি বাওয়েল ডিজিজের কারণে হয়ে থাকে।     
  • বংশগত কারণে ফ্যামিলিয়াল অ্যামাইলয়ডোসিস হয়। এই রোগটির কারণে লিভার, নার্ভ/স্নায়ু, হৃৎপিন্ড এবং কিডনিতে সমস্যার সৃষ্টি হয়। এই রোগটি নির্দিষ্ট কিছু অ্যামাইলয়ড (ট্রান্সথাইরেটিন অ্যামাইলয়ড) এর কারনে দেখা দেয়। এই অ্যামাইলয়ডের কারণে স্নায়ুতন্ত্র অথবা হৃৎপিন্ডে সমস্যার সৃষ্টি হয়।                                                                                           
  •  রক্তের প্রোটিন শরীরের বিভিন্ন সংযুক্ত স্থান এবং টেনডনে জমা হওয়ার ফলে ডায়ালিসিস অ্যামাইলয়ডোসিসের দেখা দেয়। এই রোগের ফলে শরীরে ব্যথা হয়, টানটান ভাব অনুভূত হয়, সংযুক্ত স্থানে তরল পদার্থ জমা হয় এবং কারপাল টানেল সিনড্রোম হয়ে থাকে। যারা দীর্ঘদিন ধরে ডায়ালিসিস নেন তারা এই রোগে আক্রান্ত হন।                                                                                                        

লক্ষণ

এই রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিদের মধ্যে চিকিৎসকেরা নিম্নলিখিত লক্ষণগুলি চিহ্নিত করে থাকেন: 

ঝুঁকিপূর্ণ বিষয়

যে কোনো ব্যক্তিরই অ্যামাইলয়ডোসিস হতে পারে। যে সকল কারণে এই রোগের ঝুঁকি বেড়ে যায় সে সকল কারণগুলো নিম্নে বর্ণনা করা হলোঃ
  • যাদের বয়স ৫০ বছর অথবা ৫০ বছরের বেশি সাধারনত তাদের এএল অ্যামাইলয়ডোসিস বেশি হয়ে থাকে। যদিও এই সমস্যাটি ব্যক্তির ৫০ বছর বয়সের আগেই শুরু হয়।
  • পুরুষদের এই রোগ হওয়ার ঝুকি বেশি।
  • ক্রনিক ইনফেকশন অথবা ইনফ্লামেটরি ডিজিজের কারণে এএল অ্যামাইলয়ডোসিসের ঝুঁকি বেড়ে যায়।
  • কিছু কিছু অ্যামাইলয়ডোসিস বংশগত কারণে হয়ে থাকে।
ডায়ালিসিসের মাধ্যমে সবসময় রক্তের অতিরিক্ত প্রোটিন অপসারণ বা দূর করা যায় না। ডায়ালিসিস করার সময় আপনার রক্তে অস্বাভাবিকভাবে প্রোটিন উৎপন্ন হয় এবং ধীরে ধীরে এই প্রোটিন টিস্যুতে জমা হতে থাকে। তবে আধুনিক ডায়ালিসিস পদ্ধতিতে এই ধরনের সমস্যা কম দেখা যায়।                                                                                                                                                                                                                                          

যারা ঝুঁকির মধ্যে আছে

লিঙ্গঃ পুরুষদের মধ্যে এই রোগ নির্ণয়ের সম্ভাবনা ১ গুণ কম।  মহিলাদের মধ্যে এই রোগ নির্ণয়ের গড়পড়তা সম্ভাবনা রয়েছে।
জাতিঃ শেতাঙ্গদের মধ্যে এই রোগ নির্ণয়ের গড়পড়তা সম্ভাবনা রয়েছে। অন্যদিকে কৃষ্ণাঙ্গদের মধ্যে এই রোগ নির্ণয়ের সম্ভাবনা 2 গুণ কম, হিস্প্যানিকদের মধ্যে এই রোগ নির্ণয়ের সম্ভাবনা ৪৪ গুণ কম এবং অন্যান্য জাতির মধ্যে এই রোগ নির্ণয়ের গড়পড়তা সম্ভাবনা রয়েছে। 

সাধারণ জিজ্ঞাসা

উত্তরঃ অ্যামাইলয়ডোসিস প্রতিরোধে নির্দিষ্ট কোনো খাবার নেয়। যেহেতু এই রোগটি মূত্রাশয় অথবা কিডনি সম্পৃক্ত সেহেতু এমন ধরনের খাবার খেতে হবে যেসমস্ত খাবারে প্রোটিন, সোডিয়াম, পটাশিয়াম, ফসফরাস এবং তরলের পরিমান কম থাকে। হৃদরোগে আক্রান্ত রোগীর চিকিৎসা ভিন্ন ধরনের হয় এবং এই রোগ নিরামের ক্ষেত্রে ব্যয়াম গুরুত্বপূর্ন ভুমিকা রাখে।

হেলথ টিপস্‌

কাজ করার সময় শ্বাসকষ্ট হলে কাজের মাঝে বিরতি নিতে হবে। কঠোর পরিশ্রম করা থেকে বিরত থাকতে হবে। তবে দৈনন্দিন স্বাভাবিক কাজকর্ম করতে হবে। আপনার কাজের সঠিক পরিমান সম্পর্কে জানার জন্য চিকিৎসকের সাথে পরামর্শ করুন। পুষ্টিকর খাবার আপনার শরীরে পর্যাপ্ত পরিমানে শক্তি সরবরাহ করে। কম লবনযুক্ত খাবার খেতে হবে।                                                                                                                                      

Popular posts from this blog

Anxiety and panic attacks

What is dementia ? Signs, Symptoms, Causes, Tests, Treatment, Care

ইন্ট্রাসেরিব্রাল হেমোরেজ (Intracerebral hemorrhage)