নিউমোনিয়া (Pneumonia)

নিউমোনিয়া (Pneumonia)


বর্ণনা

ফুসফুসের ইনফ্লামেশনকে (প্রদাহ) নিউমোনিয়া বলা হয়।  নিউমোনিয়া প্রধানত ফুসফুসের অ্যালভিওলাই (alveoli) নামক  ক্ষুদ্র বায়ুথলিগুলিকে আক্রান্ত করে। সাধারণত ভাইরাস বা ব্যাকটেরিয়াজনিত ইনফেকশনের কারণে এই রোগ হয়ে থাকে, তবে কিছু ক্ষেত্রে অন্যান্য অণুজীব, নির্দিষ্ট কিছু ঔষধ এবং অটোইমিউন ডিজিজের মতো রোগের কারণেও নিউমোনিয়া হতে পারে।
নিউমোনিয়ার লক্ষণ হিসেবে সাধারণত কাশি, বুক ব্যথা, জ্বর এবং শ্বাসকষ্ট দেখা দেয়। সাধারণত এক্স-রে এবং থুতু পরীক্ষার মাধ্যমে নিউমোনিয়া নির্ণয় করা হয়ে থাকে। কয়েক ধরনের নিউমোনিয়া, টিকার মাধ্যমে প্রতিরোধ করা যায়। এই রোগের চিকিৎসা রোগ সৃষ্টির কারণের উপর নির্ভর করে। ব্যাকটেরিয়ার কারণে নিউমোনিয়া সৃষ্টি হলে অ্যান্টিবায়োটিক দ্বারা চিকিৎসা করা হয়। নিউমোনিয়া তীব্র আকার ধারন করলে আক্রান্ত ব্যক্তিকে সাধারণত হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।

কারণ

সাধারণত ইনফেকশনের কারণে নিউমোনিয়া হয়ে থাকে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে এই ইনফেকশন সৃষ্টি হয় ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণের জন্য। তবে ভাইরাস এবং কিছু ক্ষেত্রে ফাঙ্গাসের কারণেও নিউমোনিয়া হতে পারে।
সাধারণত নিঃশ্বাসের মাধ্যমে ব্যাকটেরিয়ার জীবাণু শরীরে প্রবেশ করে। খুব কম ক্ষেত্রে শরীরের অন্য কোনো অংশের ইনফেকশনের কারণে নিউমোনিয়া হয়ে থাকে। এসব ক্ষেত্রে রক্তপ্রবাহের মাধ্যমে নিউমোনিয়ার জীবাণু ফুসফুসে প্রবেশ করে।
নিম্নে বিভিন্ন প্রকার নিউমোনিয়ার বর্ণনা দেওয়া হল:

ব্যাকটেরিয়াজনিত নিউমোনিয়া :

সাধারণত ট্রেপটোকক্কাস নিউমোনি (Streptococcus pneumoniae) নামক ব্যাকটেরিয়ার জন্য প্রাপ্তবয়স্কদের নিউমোনিয়া হয়ে থাকে। এই ধরনের নিউমোনিয়াকে নিউমো্কক্কাল নিউমোনিয়াও বলে।
এছাড়া হেমোফিলাস ইনফ্লুয়েঞ্জা ( Haemophilus influenzae), স্ট্যাফাইলোকক্কাস অরিয়াস ( Staphylococcus aureus ) এবং মাইকোপ্লাজমা নিউমোনি ( Mycoplasma pneumoniae ) নামক ব্যাকটেরিয়ার কারণেও নিউমোনিয়া হতে পারে।
খুব কম ক্ষেত্রে নিম্নলিখিত ব্যাকটেরিয়াগুলির কারণে নিউমোনিয়া হয়ে থাকে:
ক্ল্যামাইডোফিলা সিট্যাচি ( Chlamydophila psittaci )- এই ব্যাকটেরিয়ার কারণে সিট্যাকোসিস ( psittacosis) নামক বিরল ধরনের নিউমোনিয়া হয়ে থাকে। এই ব্যাকটেরিয়ায় আক্রান্ত টিয়া, কবুতর ও অন্যান্য কিছু পাখির মাধ্যমে ব্যাকটেরিয়াটি মানুষের দেহে প্রবেশ করে। এ কারণে সৃষ্ট রোগকে প্যারোট  ফিভার (parrot fever) বা প্যারোট ডিজিজ (parrot disease) বলে।

ক্ল্যামাইডোফিলা নিউমোনি (Chlamydophila pneumoniae):

লেজিওনেলা নিউমোফিলা (Legionella pneumophila )- এটির কারণে লেজিওনারিস ডিজিজ নামক এক ধরনের নিউমোনিয়া হয়, যা অত্যন্ত বিরল।

ভাইরাসজনিত নিউমোনিয়া:

ভাইরাসের কারণেও নিউমোনিয়া হতে পারে। সাধারণত রেসপিরেটোরি সাইনসাইটাল ভাইরাস (respiratory syncytial virus) এবং ফ্লু (ইনফ্লুয়েঞ্জা) টাইপ এ অথবা বি এর কারনে এই সমস্যা দেখা দেয়।
ভাইরাসজনিত নিউমোনিয়ায় শিশুরা বেশি আক্রান্ত হয়।

অ্যাসপিরেশন নিউমোনিয়া ( Aspiration pneumonia):

খুব কম ক্ষেত্রে  ক্ষতিকারক উপদান (ধোয়া বা রাসায়নিক পদার্থ) ও অন্যান্য বাহ্যিক বস্তু নিশ্বাসের মাধ্যমে শরীরে প্রবেশের কারণে নিউমোনিয়া হতে পারে।
এই ধরনের উপাদানগুলি ফুসফুসে প্রবেশ করে প্রদাহ সৃষ্টি করে বা ফুসফুসকে ক্ষতিগ্রস্ত করে। একেই অ্যাসপিরেশন নিউমোনিয়া বলে।

ফাঙ্গাসজনিত নিউমোনিয়া:

সাধারণত যে সব ব্যক্তির ইমিউন সিস্টেম বা রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা দুর্বল তাদের ফাঙ্গাসজনিত নিউমোনিয়া হয়ে থাকে। ফাঙ্গাসজনিত নিউমোনিয়ার প্রাদুর্ভাব যেসব অঞ্চলে বেশি সে সব অঞ্চলে ভ্রমণ করলে এই রোগ হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
ফাঙ্গাসজনিত নিউমোনিয়াকে চিকিৎসা বিজ্ঞানের ভাষায় হিসটোপ্লাজমোসিস (histoplasmosis) , কক্সিডিওআয়ডোমাইকোসিস (coccidioidomycosis) এবং ব্লাসটোমাইকোসিস (blastomycosis) বলা হয়।

লক্ষণ

এই রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিদের মধ্যে চিকিৎসকেরা নিম্নলিখিত লক্ষণগুলি চিহ্নিত করে থাকেন:

চিকিৎসা


চিকিৎসকেরা এই রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিদের নিম্নলিখিত ঔষধগুলি গ্রহণ করার পরামর্শ দিয়ে থাকেন:
amoxycillinamoxycillin + clavulanic acid
azithromycinaztreonam
benzyl penicillincefepime hydrochloride
cefotaximeceftazidime pentahydrate
ceftriaxonecefuroxime
ciprofloxacinclarithromycin
clindamycin hydrochloridedoxycycline
gentamicinhydrocortisone sodium succinate
levofloxacin hemihydratelinezolid
meropenem trihydratemoxifloxacin
vancomycin hydrochloride
চিকিৎসকেরা এই রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিদের নিম্নলিখিত টেস্টগুলি করার পরামর্শ দিয়ে থাকেন:    
আর্টেরিয়াল ব্লাড গ্যাসেস (এ-বি-জি-এস) (Arterial blood gases (ABGs))
ইলেক্ট্রোলাইটস, সেরাম (Electrolytes, serum)
সি-বি-সি (কমপ্লিট ব্লাড কাউন্ট) (CBC, Complete Blood Count)
ব্লাড কালচার (Blood culture)
ব্রঙ্গোস্কপি এন্ড বায়োপসি অফ ব্রঙ্কাস (Bronchoscopy and biopsy of bronchus)
এক্স-রে, চেস্ট পি-এ ভিউ (X-ray, Chest P/A view)
স্পুটাম সি/এস (Sputum c/s)
কর্টিসোল (Cortisol)

ঝুঁকিপূর্ণ বিষয়

নিম্নলিখিত বিষয়গুলি নিউমোনিয়ার ঝুঁকি বৃদ্ধি করে:
ধূমপান অল্পবয়স্কদের নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বৃদ্ধি করে।
  • অন্য কোনো রোগ, বিশেষত কিডনির রোগ [ ক্রনিক অবস্ট্রাকটিভ পালমোনারি ডিজিজ (chronic obstructive pulmonary disease) অথবা অ্যাজমা ]।
  • বয়স ১ বছরের কম অথবা ৬৫ বছরের বেশি হলে।
  • দুর্বল ইমিউন সিস্টেম (রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা)।
  • প্রোটন পাম্প ইনহিবিটর (proton pump inhibitor) [যেমন প্রিলোসেক (Prilosec) বা প্রোটক্সিন (Protonix)], যা পাকস্থলীর এসিডের পরিমাণ কমিয়ে দেয়।
  • অতিরিক্ত অ্যালকোহল পান।
  • সর্দি-কাশি বা ফ্লু হওয়া।

যারা ঝুঁকির মধ্যে আছে

লিঙ্গঃ পুরুষদের মধ্যে এই রোগ নির্ণয় হওয়ার গড়পরতা সম্ভাবনা থাকে। নারীদের মধ্যে এই রোগ নির্ণয় হওয়ার সম্ভাবনা ১ গুণ কম।
জাতঃ হিস্প্যানিক ও কৃষ্ণাঙ্গদের মধ্যে এই রোগ নির্ণয় হওয়ার সম্ভাবনা ১ গুণ কম। শ্বেতাঙ্গ ও অন্যান্য জাতির মানুষের মধ্যে এই রোগ নির্ণয় হওয়ার গড়পরতা সম্ভাবনা থাকে। 

সাধারণ জিজ্ঞাসা

 
উত্তরঃ নিউমোনিয়ার কারণে বেশ কিছু সমস্যা হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। নিউমোনিয়া সৃষ্টিকারী ইনফেকশন রক্তপ্রবাহেও ছড়িয়ে পড়তে পারে, যার কারণে সেপসিস (sepsis) দেখা দেয়। সেপসিস একটি মারাত্মক রোগ। এর কারণে  রক্তাচাপ কমে যায় এবং শরীরের টিস্যুতে অক্সিজেন পৌঁছাতে পারে না। এছাড়া নিউমোনিয়ার কারণে ফুসফুসের টিস্যু এবং বুকে তরল জমা হয়, যাকে প্লিউরাল ইফিউশন (pleural effusion) বলে। যেসব জীবাণু ‍নিউমোনিয়ার জন্য দায়ী সেগুলি প্লিউরাল ইফিউশনের তরলকেও সংক্রমিত করতে পারে, যাকে এমপায়েমা ( empyema) বলে। এছাড়া নিউমোনিয়ার কারণে ফুসফুস বা বায়ু চলাচলের পথে ফোড়া ( abscess) হওয়ার সম্ভাবন থাকে।

হেলথ টিপস্‌

নিউমোনিয়া থেকে কার্যকরভাবে সেরে উঠতে নিম্নলিখিত নির্দেশনাগুলি অনুসরণ করুন:
  • স্বাভাবিক জীবনযাত্রায় ফিরে যাওয়ার জন্য ব্যস্ত হবেন না। নিউমোনিয়ার মতো ফুসফুসের একটি  মারাত্মক ইনফেকশন থেকে সেরে উঠতে আপনার শরীরের কিছুটা সময় প্রয়োজন। তাই শরীরের ইমিউন সিস্টেমকে স্বাভাবিক হওয়ার জন্য কিছুটা সময় দিন। ক্লান্তিকর কোনো কাজ করবেন না।
  • অ্যান্টিবায়োটিক গ্রহণের কারণে আপনার ঘুম ঘুম বোধ হতে পারে। এরকম বোধ হলে যতোটা সম্ভব ঘুমান। ঘুম ইমিউন সিস্টেমকে স্বাভাবিক হতে সাহায্য করে।
  • নিউমোনিয়া থেকে সেরে ওঠার সময় তরল পান করা অত্যন্ত প্রয়োজনীয়।
  • ধূমপান পরিহার করতে হবে। পরোক্ষ ধূমপানও ত্যাগ করা জরুরী। নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত ব্যক্তির ক্ষতিগ্রস্ত ইমিউন সিস্টেমের উপর ধূমপান বাড়তি চাপ সৃষ্টি করে।
  • eHealth,Health,HealthCare, Health Care

Popular posts from this blog

Anxiety and panic attacks

Fever

Raynaud's disease