অর্থোস্ট্যাটিক হাইপোটেনশন (Orthostatic hypotension)

অর্থোস্ট্যাটিক হাইপোটেনশন (Orthostatic hypotension)


বর্ণনা

অর্থোস্ট্যাটিক হাইপোটেনশন (Orthostatic hypotension) পশ্চুরাল হাইপোটেনশন (postural hypotension) নামেও পরিচিত। শোয়া বা বসা থেকে দাঁড়ানোর সময় রক্তচাপ কমে গেলে তাকে অর্থোস্ট্যাটিক হাইপোটেনশন বলা হয়। এ অবস্থায় নিম্ন রক্তচাপ জনিত কারণে বিভিন্ন সমস্যা দেখা দিতে পারে। যেমনঃ মাথা ঝিম ঝিম করা, মাথা ঘোরানো, এমনকি ব্যক্তি মূর্চ্ছাও যেতে পারে। সাধারণত এ সমস্যা খুব অল্প সময়, দাঁড়ানোর পর কয়েক সেকেন্ড থেকে কয়েক মিনিট পর্যন্ত স্থায়ী হয়। এক্ষেত্রে কোনো চিকিৎসার প্রয়োজন হয় না। অধিকাংশ ব্যক্তি প্রায় সময় বসা থেকে দাঁড়ানোর পর হঠাৎ করে এই সমস্যার সম্মুখীন হতে পারে। তবে এই সমস্যা খুব বেশীক্ষণ ধরে স্থায়ী হলে (বিশেষ করে, ব্যক্তি ঘনঘন মূর্চ্ছা গেলে) তা গুরুতর অসুস্থতার লক্ষণ হতে পারে। তাই এক্ষেত্রে অবশ্যই দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। এক্ষেত্রে এ রোগের কারণের উপর এর চিকিৎসা নির্ভর করে।

কারণ

কোনো কারণে দেহের স্বাভাবিক জৈবিক প্রক্রিয়া ব্যাহত হলে রক্তচাপ কমে যায়, যার ফলে অর্থোস্ট্যাটিক হাইপোটেনশন দেখা দেয়। অর্থোস্ট্যাটিক হাইপোটেনশনের কারণগুলো নিম্নরূপঃ
  • পানিশূন্যতাঃ জ্বর, বমি, পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান না করা, গুরুতর ডায়রিয়া এবং অতিরিক্ত ঘাম হওয়ার কারণে দেহে পানিশূন্যতা হয়ে থাকে। পানিশূন্যতার ফলে দেহে রক্তের পরিমাণ কমে যায়। স্বল্প মাত্রায় পানিশূন্যতার কারণে অর্থোস্ট্যাটিক হাইপোটেনশনের বিভিন্ন লক্ষণ যেমনঃ ক্লান্তিবোধ, অবসাদ, মাথা ঝিম ঝিম করা ইত্যাদি দেখা দিতে পারে।
  • হার্টের সমস্যাঃ হার্টের বিভিন্ন সমস্যা যেমনঃ ব্র্যাডিকার্ডিয়া, হার্ট ভাল্ভের সমস্যা, হার্ট অ্যাটাক, হার্ট ফেইলিয়রের কারণে নিম্ন রক্তচাপ দেখা দেয়। যার ফলে প্রয়োজনের সময় (যেমনঃ বসা বা শোয়া অবস্থা থেকে দাঁড়ানোর সময়) দেহে রক্ত সরবরাহের পরিমাণ কমে যায়।
  • এন্ডোক্রাইন সম্পর্কিত সমস্যাঃ থায়রয়েড সমস্যা, হাইপোগ্লেসিমিয়া (রক্তে সুগারের পরিমাণ কমে যায়), এড্রেনাল ইন্সাফিসিয়েন্সি (adrenal insufficiency), ডায়াবেটিসের কারণে নিম্ন রক্তচাপ দেখা দিতে পারে।
  • নার্ভাস সিস্টেম ডিজঅর্ডারঃ নির্দিষ্ট কিছু নার্ভাস সিস্টেম ডিজঅর্ডার যেমনঃ পারকিনসন্স ডিজিজ (Parkinson's disease), মাল্টিপল সিস্টেম অ্যাট্রোফি (multiple system atrophy), লিউয়ি বডি ডিমেনশিয়া (Lewy body dementia), পিউর অটোনোমিক ফেইলিয়র (pure autonomic failure) এবং অ্যামাইলোয়ডোসিস (amyloidosis) ইত্যাদির কারণে নিম্ন রক্তচাপ দেখা দিতে পারে।
  • খাবারের পরঃ বয়স্কদের ক্ষেত্রে দেখা যায়, দৈনন্দিন পর্যাপ্ত পরিমাণ খাবার খাওয়ার পরও রক্তচাপ কমে যায়। এই সমস্যা পোস্টপ্র্যান্ডিয়াল হাইপোটেনশন (postprandial hypotension) নামে পরিচিত।

লক্ষণ

এই রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিদের মধ্যে চিকিৎসকেরা নিম্নলিখিত লক্ষণগুলি চিহ্নিত করে থাকেন: 

ঝুঁকিপূর্ণ বিষয়

অর্থোস্ট্যাটিক হাইপোটেনশনের ক্ষেত্রে ঝুঁকিপূর্ণ বিষয়গুলো হলোঃ
  • বয়সঃ সাধারণত বয়স্কদের ক্ষেত্রে (যাদের বয়স ৬৫ বা এর ঊর্ধ্বে) অর্থোস্ট্যাটিক হাইপোটেনশনের ঝুঁকি বেশি। বয়স বাড়ার সাথে সাথে হৃৎপিণ্ড ও ঘাড়ের ববাবরে অবস্থিত রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণকারী বিশেষ কোষগুলোর (বেরোরিসেপ্টর) কার্যকারিতা হ্রাস পায়। যার ফলে হদস্পন্দনের গতি কমে যায়।
  • নির্দষ্ট ঔষধের ব্যবহারঃ উচ্চ রক্তচাপ ও হৃদরোগ নিয়ন্ত্রনের জন্য ব্যবহৃত ঔষধ যেমনঃ ডাইউরেটিক্স (diuretics), বেটা ব্লকারস (beta blockers), ক্যালসিয়াম চ্যানেল ব্লকারস (calcium channel blockers), আলফা ব্লকারস (alpha blockers) এবং নাইট্রেটস  (nitrates) অর্থোস্ট্যাটিক হাইপোটেনশনের ঝুঁকি বাড়ায়।
  • নির্দিষ্ট কিছু শারীরিক সমস্যাঃ হৃদরোগ যেমনঃ হার্ট ভাল্ভ প্রব্লেম, হার্ট ফেইলিয়র, হার্ট অ্যাটাক এবং নির্দিষ্ট কিছু নার্ভাস সিস্টেম ডিজঅর্ডার যেমনঃ পারকিনসনস ডিজিজ (Parkinson's disease) ইত্যাদির কারণে ব্যক্তির রক্তচাপ কমে যেতে পারে।
  • তাপের সংস্পর্শেঃ অতিরিক্ত গরম অবহাওয়ায় ঘামের পরিমাণ বেড়ে যায়। যার ফলে পানিশূন্যতা দেখা দেয় এবং রক্তচাপ কমে যায়। পরবর্তীতে অর্থোস্ট্যাটিক হাইপোটেনশন দেখা দেওয়ার ঝুঁকি বেড়ে যায়।
  • বেড রেস্টঃ কোনো শারীরিক অসুস্থতার কারণে দীর্ঘদিন বেড রেস্টে থাকলে শরীর দুর্বল হয়ে পড়ে। এ অবস্থায় ব্যক্তি যখন দাঁড়ানোর চেষ্টা করে তখন অর্থোস্ট্যাটিক হাইপোটেনশন দেখা দিতে পারে।
  • গর্ভাবস্থায়ঃ গর্ভাবস্থায় দেহের সংবহনতন্ত্র দ্রুত প্রসারিত হয়। যার ফলে রক্তচাপ স্বভাবতই কমে যায়। তবে সন্তান প্রসবের পর রক্তচাপ পুনরায় স্বাভাবিক মাত্রায় ফিরে আসে।
  • মদ্যপানঃ নিয়মিত মদ্যপান অর্থোস্ট্যাটিক হাইপোটেনশনের ঝুঁকি বাড়ায়।

যারা ঝুঁকির মধ্যে আছে

লিঙ্গঃ পুরুষ ও মহিলা উভয়ের ক্ষেত্রে এই রোগ নির্ণয়ের গড়পড়তা সম্ভাবনা রয়েছে।
জাতিঃ শ্বেতাঙ্গদের মধ্যে এই রোগ নির্ণয়ের গড়পড়তা সম্ভাবনা রয়েছে। অপরদিকে, হিস্পানিক, কৃষ্ণাঙ্গ ও অন্যান্য জাতির ক্ষেত্রে এই রোগ নির্ণয়ের সম্ভাবনা একগুণ কম।

সাধারণ জিজ্ঞাসা

উত্তরঃ যথাযথ চিকিৎসার মাধ্যমে এই রোগ সম্পূর্ণভাবে ভালো হওয়া সম্ভব। 

হেলথ টিপস্‌

নিম্নলিখিত উপায়ে এই রোগ নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধ সম্ভবঃ
  • খাবারে লবণের ব্যবহারঃ নিম্ন রক্তচাপ দেখা দিলে খাবারে একটু বেশী পরিমাণ লবনের ব্যবহার এই সমস্যা প্রতিরোধে সাহায্য করে। তবে মনে রাখতে হবে, অতিরিক্ত লবণের ব্যবহার অন্যান্য শারীরিক সমস্যার ঝুঁকি বাড়ায়। তাই খাবারে অতিরিক্ত লবণ ব্যবহারের পূর্বে সতর্ক থাকতে হবে প্রয়োজনে ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে।
  • পরিমিত পরিমাণে খাদ্যগ্রহণঃ খাবার খাওয়ার পরই রক্তচাপ কমে গেলে কম পরিমাণে স্বল্পমাত্রায় কার্বোহাইড্রেইটযুক্ত খাবার খেতে হবে।
  • পানিশূন্যতা রোধেঃ দেহে পানির ভারসাম্যতা স্বাভাবিক রাখতে প্রচুর পরিমাণে পানি ও তরল জাতীয় খাবার খেতে হবে। একই সাথে মদ্যপান পরিহার করতে হবে।
  • ব্যায়াম ও অনুশীলনঃ বসা থেকে দাঁড়ানোর সময় কাফ মাসল স্বাভাবিক রাখতে হালকা ব্যায়াম করা যেতে পারে। ঘুম ভাঙ্গার পর বিছানা ছেড়ে উঠার আগে বিছানার কিনারায় কিছুক্ষণ পা ঝুলিয়ে বসুন। নিয়মিত ব্যায়াম ও অনুশীলনের মাধ্যমে অর্থোস্ট্যাটিক হাইপোটেনশন নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব।
  • বিছানায় শোয়ার অবস্থানঃ বিছানায় শোয়ার সময় মাথা বালিশের সাহায্যে একটু উপরের দিকে রাখুন।
  • দাঁড়ানো অবস্থায় করণীয়ঃ দাঁড়ানো অবস্থায় অর্থোস্ট্যাটিক হাইপোটেনশনের লক্ষণসমূহ দেখা দিলে পা দুটো আড়াআড়ি ভাবে রাখার চেষ্টা করুন। অথবা একটা পা চেয়ারে রেখে সামনের দিকে ঝুঁকে দাড়ান। এতে রক্তপ্রবাহ পুনরায় স্বাভাবিক হবে।
  • eHealth,Health,HealthCare, Health Care

Popular posts from this blog

Anxiety and panic attacks

What is dementia ? Signs, Symptoms, Causes, Tests, Treatment, Care

ইন্ট্রাসেরিব্রাল হেমোরেজ (Intracerebral hemorrhage)