হাইপারএমেসিস গ্রেভিডেরাম (Hyperemesis gravidarum)

হাইপারএমেসিস গ্রেভিডেরাম (Hyperemesis gravidarum)



বর্ণনা

হাইপারএমেসিস গ্রেভিডেরাম হলো একটি বিরল রোগ। এই সমস্যার কারণে গর্ভাবস্থায় বমি বমি ভাব অনুভূত হয় এবং দীর্ঘ সময় ধরে বমি হয়ে থাকে। যার ফলে গর্ভবতী মহিলাকে হসপিটালে ভর্তি করার প্রয়োজন দেখা দিতে পারে। ঘনঘন বমি হওয়ার কারণে গর্ভবতী মহিলার বিভিন্ন ধরনের সমস্যা দেখা দেয় যেমনঃ পানিশুন্যতা, ভিটামিন ও মিনারেলের অভাব এবং শরীরের ওজন স্বাভাবিকের তুলনায় ৫ শতাংশ কমে যায়।
গর্ভাবস্থায় বমি বমি ভাব এবং বমি হওয়া সমস্যাটি ‘মর্নিং সিকনেস’ (প্রাতঃকালীন অসুস্থতা) নামেও পরিচিত। অধিকাংশ গবেষকদের মতে, এই সমস্যাটি গর্ভবতী মহিলার শরীরিক, মানসিক এবং সামাজিক অবস্থার উপর প্রভাব ফেলে। অধিকাংশ ক্ষেত্রে হালকা হালকা বমি বমি ভাব এবং বমি হওয়া থেকেই হাইপারএমেসিস গ্রেভিডেরামের সূত্রপাত হয়ে থাকে। এই রোগের সঠিক কোনো কারণ জানা যায়নি।
হাইপারএমেসিস গ্রেভিডেরাম যখন প্রাথমিক পর্যায়ে থাকে তখন পরিমানমত খাবার গ্রহন, বিশ্রাম অ্যান্টাসিড ব্যবহার করার মাধ্যমে রোগীর চিকিৎসা করা হয়। এই রোগটি মারাত্মক আকার ধারন করলে রোগীর শিরায় তরল পদার্থ এবং পুষ্টিকর উপাদান প্রদান করতে হবে।

কারণ

গর্ভাবস্থায় অধিকাংশ মহিলাদেরই ‘মর্নিং সিকনেস’ দেখা দেয়। গর্ভাবস্থায় বমি বমি ভাব এবং বমি হওয়াকে ‘মর্নিং সিকনেস’ বলে। এই সমস্যাটি শুধুমাত্র সকালে দেখা দেয় না বরং এটি যে কোনো সময়ে দেখা দিতে পারে।
গবেষকদের মতে ‘মর্নিং সিকনেস’ এবং তীব্র/প্রচন্ড বমি বমি ভাব হওয়ার কারণে হাইপারএমেসিস গ্রেভিডেরাম দেখা দেয়। গর্ভাবস্থায় হিউম্যান ক্রনিক গোনাডোট্রোপিন (এইচসিজি) নামক হরমোনের কারণে ‘মর্নিং সিকনেস’ এবং তীব্র/প্রচন্ড বমি বমি ভাব অনুভূত হয়। এইচসিজি হরমোন প্লাসেন্টা (গর্ভ ফুল) থেকে সৃষ্টি হয়। মাতৃগর্ভে শিশু প্লাসেন্টার মাধ্যমে খাদ্য গ্রহন করে। গর্ভধারনের প্রাথমিক পর্যায়ে মহিলাদের দ্রুত গতিতে প্রচুর পরিমানে এই হরমোন উৎপন্ন হয়। সাধারনত প্রতি ৪৮ থেকে ৭২ ঘন্টার মধ্যেই এই হরমোনের মাত্রা দ্বিগুন হয়ে থাকে এবং সন্তান জন্মদানের পূর্ব পর্যন্ত এই হরমোনের মাত্রা ক্রমাগত বাড়তে থাকে।

লক্ষণ

এই রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিদের মধ্যে চিকিৎসকেরা নিম্নলিখিত লক্ষণগুলি চিহ্নিত করে থাকেন:

ঝুঁকিপূর্ণ বিষয়

এই রোগের ঝুঁকিপূর্ণ বিষয় গুলো নিচে দেওয়া হলো।
  • পূর্বে হাইপারএমেসিস গ্রেভিডেরাম হলে
  • মাতৃগর্ভে একের অধিক শিশু থাকলে
  • স্থুলতা/অধিক ওজন
  • প্রথমবার গর্ভধারন করলে
ট্রোইফোব্লাসটিক ডিজিজের কারণেও হাইপারএমেসিস গ্রেভিডেরাম হতে পারে। জরায়ুর ভিতরের সেল (কোষ) গুলো অস্বাভাবিক ভাবে বৃদ্ধি পাওয়ার ফলে ট্রোইফোব্লাসটিক ডিজিজ দেখা দেয়।

যারা ঝুঁকির মধ্যে আছে

লিঙ্গঃ পুরুষদের মধ্যে এই রোগ নির্ণয়ের সম্ভাবনা ২৯৪৮ গুণ কম। মহিলাদের মধ্যে এই রোগ নির্ণয়ের গড়পড়তা সম্ভাবনা রয়েছে। 
জাতিঃ শেতাঙ্গদের মধ্যে এই রোগ নির্ণয়ের সম্ভাবনা ১ গুণ কম। অন্যদিকে কৃষ্ণাঙ্গ, হিসপানিক এবং এবং অন্যান্য জাতির মধ্যে এই রোগ নির্ণয়ের গড়পড়তা সম্ভাবনা রয়েছে। 

সাধারণ জিজ্ঞাসা


উত্তরঃ গর্ভাবস্থায় যদি আপনার শরীরের ওজন কমে যায় এবং আপনি অসুস্থ হয়ে পরেন তাহলে আপনার শিশুর ক্ষতি হতে পারে। যদি আপনি পর্যাপ্ত পরিমানে তরল খাবার গ্রহন না করেন এবং ঘনঘন বমি করেন তাহলে আপনার মারাত্মক পানিশুন্যতা দেখা দিবে। যার ফলে আপনাকে হসপিটালে ভর্তি করার প্রয়োজন দেখা দিতে পারে। ‘মর্নিং সিকনেস’ অথবা বমি বমি ভাব এবং বমি হওয়ার কারণে আপনার খাওয়ার চাহিদা কমে যাবে। এর ফলে শরীরে পুষ্টির অভাব দেখা দিবে। এনভিপি দেখা দিলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।    
উত্তরঃ অধিকাংশ মহিলাদের ক্ষেত্রে এনভিপি সমস্যাটি গর্ভাবস্থার ৪ থেকে ৮ সপ্তাহের মধ্যেই দেখা যায় এবং ১২ থেকে ১৬ সপ্তাহের মধ্যেই এই সমস্যাটি দূর হয়ে যায়। তবে কিছু কিছু মহিলাদের ক্ষেত্রে এটি দীর্ঘ দিন পর্যন্ত স্থায়ী হতে পারে। সাম্প্রতিক গবেষণায় দেখা গেছে যে, ‘এনভিপি’ তে আক্রান্ত ১০ শতাংশ গর্ভবতী মহিলাদের মধ্যে সন্তান জন্মদানের ২২ সপ্তাহ পরেও এই সমস্যার উপসর্গ গুলো দেখা দেয়।
উত্তরঃ কিছু কিছু মহিলাদের ক্ষেত্রে এই সমস্যাটি সন্তান জন্মদানের পূর্ব পর্যন্ত স্থায়ী হয়। সেক্ষেত্রে সন্তান প্রসবের পূর্ব পর্যন্ত থেরাপি দেওয়া হয়। আপনার উপসর্গ গুলো চিকিৎসকের কাছে বর্ননা করুন।                                                                                                                                                                                     

হেলথ টিপস্‌

যদিও হাইপারএমেসিস গ্রেভিডেরাম সম্পূর্নভাবে প্রতিরোধ করা সম্ভব নয় তবুও কিছু কিছু বিষয় অনুসরন করার মাধ্যমে এই সমস্যাটির তীব্রতা কমানো যায়।
  • কম পরিমানে ঘনঘন খাবার খেতে হবে।
  • সহজেই হজম হয় এমন ধরনের খাবার খেতে হবে।
  • বমি বমি ভাব ঠিক হয়ে যাওয়ার পরে আয়রন সাপ্লিমেন্ট গ্রহন করতে হবে।
  • চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী কব্জিতে বন্ধনি, ভিটামিন বি৬ এবং আদা ব্যবহার করতে হবে।

Popular posts from this blog

Anxiety and panic attacks

Fever

Raynaud's disease