Heart block - হার্ট ব্লক
- Get link
- X
- Other Apps
হার্ট ব্লক (Heart block)
বর্ণনা
হৃৎপিণ্ড পাম্পের ন্যায় সংকোচন প্রসারণের মাধ্যমে সারাদেহে রক্ত সরবরাহ করে। হৃৎস্পন্দনের ফলে হৃৎপিণ্ডে সংকোচন-প্রসারণ হয়ে থাকে, যা তড়িৎ প্রবাহের ফলে সৃষ্টি হয়। হৃৎপিণ্ডের ডান অলিন্দ বা অ্যাট্রিয়ামের উপরের অংশে সাইনোঅ্যাট্রিয়াল নোড অবস্থিত, যাকে হৃৎপিণ্ডের পেসমেকার বলা হয়। এই পেসমেকার থেকে তড়িৎ প্রবাহ সৃষ্টি হয়। পেসমেকার সংকেত পাঠালে তড়িৎ প্রবাহ অ্যাট্রিয়া বা অলিন্দ থেকে অ্যাট্রিও ভেন্ট্রিকুলার পথের ভেতর দিয়ে ভেন্ট্রিকলে বা নিলয়ে পৌঁছায় এবং হৃৎপেশী সংকুচিত-প্রসারিত হয়। এই তড়িৎ প্রবাহে কোনো রকম বাধার সৃষ্টি হলে বা ত্রুটি দেখা দিলে তাকে হার্ট ব্লক বলে। এ অবস্থায় হৃৎপিণ্ডের উপরের অংশ (Atria) থেকে নিম্নের অংশে (Venticles) তড়িৎ প্রবাহের সময় প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি হয় ও হৃৎস্পন্দন কমে যায়। এ কারণে হার্ট ব্লককে অ্যাট্রিও ভেন্ট্রিকুলার (atrioventricular block) বা এ-ভি ব্লক (AV block) বলা হয়।
কারণ
বিভিন্ন কারণে হার্ট ব্লক হতে পারে। জন্মগতভাবে একজন ব্যক্তির হার্টে ব্লক থাকতে পারে। আবার অন্য কোনো শারীরিক সমস্যার জন্যও এটি হতে পারে। হার্ট ব্লক তিন ধরনের হয়ে থাকে- ১. ফার্স্ট ডিগ্রী হার্ট ব্লক, ২. সেকেন্ড ডিগ্রী হার্ট ব্লক ও ৩. থার্ড ডিগ্রী হার্ট ব্লক। নিম্নে এই তিন ধরনের হার্ট ব্লকের কারণগুলো আলোচনা করা হল-
১. ফার্স্ট ডিগ্রী হার্ট ব্লক
ফার্স্ট ডিগ্রী হার্ট ব্লক পেশাদার খেলোয়ার বা অ্যাথলেটদের বেশি হয়ে থাকে। অতিরিক্ত অনুশীলনের ফলে হৃৎপেশী প্রসারিত হয়ে পড়ে, যার ফলে হৃৎপিণ্ডে তড়িৎ প্রবাহের ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি হয়। এর অন্যান্য কারণগুলো হলো:
- হৃৎপেশীর ইনফ্লামেশন (প্রদাহ/জ্বালাপোড়া) বা মায়োকার্ডাইটিস (Myocarditis)।
- রক্তে পটাশিয়ামের মাত্রা কমে যাওয়া (hypokalaemia)।
- রক্তে ম্যাগনেশিয়ামের মাত্রা কমে যাওয়া (hypomagnesemia)।
নির্দিষ্ট কিছু ঔষধ ব্যবহারের কারণেও ফার্স্ট ডিগ্রী হার্ট ব্লক হতে পারে, যেমন:
- অ্যান্টি এরিদমেটিক (Antiarrhythmics) বা অস্বাভাবিক হৃৎস্পন্দনের চিকিৎসার ক্ষেত্রে যে সকল ঔষধ ব্যবহার করা হয়, যেমন- ডাইসোপিরামাইড (disopyramide)।
- উচ্চ রক্তচাপের জন্য যে সকল ঔষধ ব্যবহার করা হয়, যেমন- ক্যালসিয়াম চ্যানেল ব্লকারস (calcium channel blockers)।
- হার্ট ফেইলিয়রের জন্য যে সকল ঔষধ ব্যবহার করা হয়, যেমন- (digoxin)।
২. সেকেন্ড ডিগ্রী হার্ট ব্লক
জন্মগতভাবেই কোনো কোনো শিশুর হৃৎপিণ্ডে সমস্যা থাকে, যার কারণে সেকেন্ড ডিগ্রী হার্ট ব্লক হতে পারে। এর অন্যান্য কারণগুলো হলো:
- হার্ট অ্যাটাকের সময় হৃৎপিণ্ডের কোনো ক্ষতি হওয়া।
- লাইম ডিজিজ (টিক দ্বারা সৃষ্ট এক ধরনের ব্যাকটেরিয়াল ইনফেকশন)।
- নির্দিষ্ট কিছু ঔষধ ব্যবহার, যেমন- উচ্চ রক্তচাপের চিকিৎসার ক্ষেত্রে ব্যবহৃত ঔষধ ক্যালসিয়াম চ্যানেল ব্লকার, অস্বাভাবিক হৃৎস্পন্দনের জন্য ব্যবহৃত ঔষধ মিয়োডেরন (amiodarone), নিউমোনিয়ার চিকিৎসার জন্য ব্যবহৃত ঔষধ পেন্টামিডিন (pentamidine)।
৩. থার্ড ডিগ্রি কনজেনিটাল হার্ট ব্লক
কোনো মহিলা অটোইমিউন ডিজিজে আক্রান্ত হলে (যেমনঃ লিউপাস- Lupus) তার বাচ্চার থার্ড ডিগ্রী কনজেনিটাল হার্ট ব্লক হয়ে থাকে। অটোইমিউন ডিজিজে আক্রান্ত হলে অ্যান্টিবায়োটিক বা রোগ প্রতিরোধকারী কোষগুলো দেহের উপকারী কোষ ও টিস্যুগুলোকে নষ্ট করতে থাকে। এ অবস্থায় অ্যান্টিবডি মাতৃগর্ভের শিশুকে কোনো ক্ষতিকারক ভাইরাস বা টিস্যু মনে করে আক্রমণ করে। যার ফলে শিশুর হার্টের ক্ষতি হয়। জন্মগতভাবে হৃৎপিণ্ডে কোনো ত্রুটি থাকলে বাচ্চার থার্ড ডিগ্রী কনজেনিটাল হার্ট ব্লক হতে পারে।
থার্ড ডিগ্রী অ্যাকোর্য়াড হার্ট ব্লক
বেশির ভাগ ক্ষেত্রে হৃৎপিণ্ডের কোনো ক্ষতি হলে এই ধরনের হার্ট ব্লক হয়ে থাকে। বিভিন্ন কারণে হৃৎপিণ্ডের ক্ষতি হতে পারে। যেমন-
- হৃৎপিণ্ডে অপারেশনের সময় কোনো সমস্যা দেখা দেওয়া (এটি থার্ড ডিগ্রী হার্ট ব্লকের অন্যতম প্রধান কারণ)।
- করোনারি হার্ট ডিজিজ অর্থাৎ হৃৎপিণ্ডে রক্ত সরবরাহকারী ধমনী সরু হয়ে যাওয়ার কারণে রক্তপ্রবাহ কমে যাওয়া।
- ক্যান্সার, থাইরয়েডের সমস্যা ও অন্যান্য রক্ত সম্বন্ধীয় শারীরিক সমস্যার জন্য রেডিওথেরাপি নেওয়া।
- মারাত্মক ইনফেকশন, যেমন- ডিপথেরিয়া (এক ধরনের ব্যাকটেরিয়াল ইনফেকশন যার কারণে হার্ট ইনফ্লামেশনের সৃষ্টি হয়) এবং রিমেটিক ফিভার (এক ধরনের ব্যাকটেরিয়াল ইনফেকশন, যার ফলে হৃৎপিণ্ডের ভাল্ভ বা প্রকোষ্ঠ ক্ষতিগ্রস্থ হয়)।
- উচ্চ রক্তচাপের মাত্রা অনিয়ন্ত্রিত হয়ে পড়া (Hypertension)।
- শরীরের অন্য কোনো অংশের ক্যান্সার হৃৎপিণ্ডে ছড়িয়ে পড়া।
- অস্বাভাবিক হৃদস্পন্দন বা এরিদমিয়ার (Arrhythmia) চিকিৎসার জন্য দেখা দেওয়া সমস্যাসমূহ। এগুলি রেডিওফ্রিকোয়েন্সি এ্যাবলেশন (radiofrequency ablation) নামে পরিচিত।
- ছুরির আঘাত বা গুলিবিদ্ধ হওয়ার কারণে হৃৎপিণ্ডে কোনো ক্ষতের সৃষ্টি হওয়া।
- কিছু কিছু ঔষধ ব্যবহারের কারণেও থার্ড ডিগ্রী অ্যাকোর্য়াড হার্ট ব্লক হতে পারে, যেমন- ডাইজোক্সিন (digoxin), ক্যালসিয়াম চ্যানেল ব্লকারস (calcium-channel blockers), বেটা ব্লকারস |(Beta blockers), ট্রাইসাইক্লিক এন্টিডিপ্রেসেন্ট (tricyclic antidepressants) ও ক্লোনিডিন (clonidine)।
চিকিৎসা
চিকিৎসকেরা এই রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিদের নিম্নলিখিত ঔষধগুলি গ্রহণ করার পরামর্শ দিয়ে থাকেন:
| atropine sulphate | sotalol hydrochloride |
ঝুঁকিপূর্ণ বিষয়
হার্ট ব্লকের ক্ষেত্রে ঝুঁকিপূর্ণ বিষয়গুলি হল:
- বয়স বাড়ার সাথে সাথে এ রোগের ঝুঁকি বৃদ্ধি পায়।
- এথেরোসক্লেরোসিস (Atherosclerosis) হওয়া (চর্বি বা চর্বিযুক্ত পদার্থ জমার ফলে যে সমস্যা দেখা দেয়)।
- ডায়বেটিস।
- উচ্চ রক্তচাপ বা হাইপারটেনশন।
- হৃদরোগ।
- ইলেকট্রোলাইট ইমব্যারল্যান্স।
- খাদ্যে পুষ্টির অভাব থাকা।
- প্রতিদিনের খাবারে লবণ ও কোলেস্টেরলের পরিমাণ বেশি হওয়া।
- মানসিক চাপ ও দুশ্চিন্তা।
- কর্মবিমুখতা।
- স্বাস্থ্যহীনতা।
যারা ঝুঁকির মধ্যে আছে
লিঙ্গঃ পুরুষদের মধ্যে এই রোগ নির্ণয়ের গড়পড়তা সম্ভাবনা রয়েছে। মহিলাদের মধ্যে এই রোগ নির্ণয়ের সম্ভাবনা ১ গুণ কম।
জাতিঃ শ্বেতাঙ্গদের মধ্যে এই রোগ নির্ণয়ের গড়পড়তা সম্ভাবনা রয়েছে। কৃষ্ণাঙ্গদের মধ্যে এই রোগ নির্ণয়ের সম্ভাবনা ২ গুণ কম। হিস্প্যানিক ও অন্যান্য জাতির মধ্যে এই রোগ নির্ণয়ের সম্ভাবনা ১ গুণ কম।
সাধারণ জিজ্ঞাসা
উত্তরঃ সাধারণত ফার্স্ট ডিগ্রী হার্ট ব্লকের পর ব্যক্তি পুনরায় স্বাভাবিক জীবনযাপন করতে পারে। তবে সেকেন্ড ও থার্ড ডিগ্রী হার্ট ব্লকের পর চিকিৎসকের নির্দেশানুযায়ী খাবার খেতে হবে ও নিয়মিত শারীরিক অনুশীলন করতে হবে। সেকেন্ড ডিগ্রী হার্ট ব্লকের পর পেসমেকারের প্রয়োজন হয় না। তবে নিয়মিত চেক-আপ করাতে হবে।
হেলথ টিপস্
নিম্নলখিত উপায়ে হার্ট ব্লক প্রতিরোধ করা সম্ভব:
- যে কোনো হৃদরোগের ক্ষেত্রে দ্রুত চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে হবে।
- যেসব ঔষধ ব্যবহারের ফলে হার্ট ব্লক হতে পারে সেগুলি এড়িয়ে চলতে হবে।
- ওজন ণিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে। নিয়মিত শারীরিক অনুশীলন করতে হবে এবং প্রতিদিন পরিমিত পরিমাণ খাদ্যগ্রহণ করতে হবে।
- ধূমপান পরিহার করতে হবে।
- RxHealer, eHealth, Health Care, Healthcare
- Get link
- X
- Other Apps