পালমোনারী এমবলিজম (Pulmonary embolism)

পালমোনারী এমবলিজম (Pulmonary embolism)

বর্ণনা

ফুসফুসের এক বা একাধিক ধমনীতে অবদ্ধতা সৃষ্টি হওয়াকে পালমোনারি এমবলিজম বলে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে পা থেকে ফুসফুসে গমনকারী রক্ত জমাট বাঁধার কারণে এই রোগ দেখা দেয়। তবে কিছু ক্ষেত্রে শরীরের অন্যান্য অংশ থেকে আসা রক্ত জমাট বাঁধার কারণেও রোগটি হতে পারে [ ডিপ ভেইন থ্রম্বোসিস, ডি-ভি-টি ( deep vein thrombosis, DVT )]।
যেহেতু বেশিরভাগ ক্ষেত্রে পালমোনারি এমবলিজম ডিপ ভেইন থ্রম্বোসিসের সাথে দেখা দেয়, তাই অনেক চিকিৎসক এই দুটি রোগকে এক সাথে ভেনাস থ্রমবোএমবলিজম (ভি-ই-টি) [ venous thromboembolism (VTE) ] বলে থাকেন।
যে কোনো ব্যক্তিই উপরোক্ত দুটি রোগে আক্রান্ত হতে পারে। তবে শরীরের নড়াচড়ার অভাব, ক্যান্সার ও সার্জারির কারণে রোগ দুটি হওয়ার ঝুঁকি বৃদ্ধি পায়।
পালমোনারি এমবলিজমের কারণে এই রোগে আক্রান্ত ব্যক্তির মৃত্যু হতে পারে। তবে আক্রান্ত ব্যক্তি দ্রুত চিকিৎসা নিলে তার মৃত্যুর ঝুঁকি অনেকাংশে কমে যায়। পায়ে রক্ত জমাট বাঁধার ঝুঁকি কমিয়েও পালমোনারি এমবলিজম হওয়ার সম্ভাবনা কমানো যায়।

কারণ

ফুসফুসের ধমনীতে আবদ্ধতা সৃষ্টি হয়ে যাওয়ার ফলে পালমোনারি এমবলিজম হয়ে থাকে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে পা থেকে ফুসফুসে গমনকারী রক্ত ফুসফুসের ক্ষুদ্র ধমনীতে জমাট বাঁধার কারণে এই রোগ দেখা দেয়।
  • বেশিরভাগ ক্ষেত্রে পায়ের শিরায় (deep leg veins) রক্ত জমাট বাঁধার কারণে এই রোগ হয়ে থাকে। তবে বাহু ও শ্রোণীর শিরায় রক্ত জমাট বাঁধার কারণেও রোগটি হতে পারে।
  • কিছু ক্ষেত্রে সারফেস ভেইনেও (surface vein) রক্ত জমাট বাঁধতে পারে। তবে এই ধরনের জমাট বাঁধা রক্ত খুব কম ক্ষেত্রে পালমোনারি এমবলিজম সৃষ্টি করে।
  • এছাড়া নিম্নলিখিত কারণেও কিছু কিছু ক্ষেত্রে এই রোগ সৃষ্টি হতে পারে-
    • সংক্রমণকারী বস্তুর পিণ্ড।
    • সার্জারি, ট্রমা বা মারাত্মকভাবে পুড়ে যাওয়ার কারণে রক্তপ্রবাহে চর্বি মিশে গেলে।
    • ট্রমা, সার্জারি বা অন্য কোনো চিকিৎসার কারণে রক্তে বুদবুদ বা অন্য কোনো পদার্থ গেলে।
    • দ্রুত বৃদ্ধিপ্রাপ্ত ক্যান্সার সেলের কারণে সৃষ্ট টিউমার।

লক্ষণ

এই রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিদের মধ্যে চিকিৎসকেরা নিম্নলিখিত লক্ষণগুলি চিহ্নিত করে থাকেন: 

ঝুঁকিপূর্ণ বিষয়

নিম্নলিখিত বিষয়গুলি রক্ত জমাট বাঁধার ঝুঁকি বৃদ্ধি করে-
  • রক্তপ্রবাহ ও রক্তনালীতে আঘাত: রক্ত প্রবাহের গতি কম হওয়া এবং রক্তনালীতে আঘাত লাগা।
  • বয়স: বয়স বৃদ্ধি পেলে (৭০ বছরের বেশি) শরীরে রক্ত জমাট বাঁধার সম্ভাবনা বৃদ্ধি পায়।
  • ওজন: শরীরের অতিরিক্ত ওজন রক্ত জমাট বাঁধার ঝুঁকি বৃদ্ধি করে।
  • ধূমপান: ধূমপানের কারণে কিছু ব্যক্তির রক্ত জমাট বাঁধার সম্ভাবনা বৃদ্ধি পেতে পারে। তবে ঠিক কী কারণে এমনটি ঘটে থাকে, তা এখনো পরিষ্কার নয়।
  • গর্ভধারণ: গর্ভস্থ শিশুর ওজন পেল্ভিসের শিরার উপর চাপ ফেলে। এর ফলে পা থেকে আসা রক্ত প্রবাহের গতি কমে যেতে পারে। রক্ত প্রবাহের গতি কমে গেলে বা কোনো স্থানে আটকে গেলে রক্ত জমাট বাঁধতে পারে।
  • ইস্ট্রোজেন গ্রহণ: জন্ম নিরোধক ঔষধ ও হরমোন রিপ্লেসমেন্ট থেরাপি (hormone replacement therapy) রক্ত জমাট বাঁধার ঝুঁকি বৃদ্ধি করে। বিশেষত ধূমপায়ী ও স্থূল ব্যক্তিদের শরীরে এই সমস্যা বেশি হয়ে থাকে।

সাধারণ জিজ্ঞাসা

 
উত্তরঃ রোগটি দীর্ঘস্থায়ী হবে কীনা, তা এর কারণ ও পালমোনারি এমবলিজমের কারণের উপর নির্ভর করছে। ক্রনিক থ্রমবোএমবোলিক ডিজিজ (called chronic thromboembolic disease) নামক একটি রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিদের শরীরে বারবার রক্ত জমাট বাঁধার সমস্যা দেখা দেয়। পালমোনারি এমবলিজম বড় হলে ক্রনিক সিকুয়েলি (chronic sequelae) হতে পারে। রোগটি নির্ণিত হওয়ার পর এর চিকিৎসা করা সম্ভব। 
উত্তরঃ পালমোনারি এমবলিজম এমনিতেই সেরে যেতে পারে। নির্ণিত হওয়ার পর সঠিকভাবে এর চিকিৎসা করা হলে এটি গুরুতর রূপ ধারণ করতে পারে না। তবে চিকিৎসা না করা হলে পালমোনারি এমবলিজম গুরুতর হয়ে উঠতে পারে এবং এর ফলে অন্যান্য শারীরিক সমস্যা দেখা দিতে পারে। এমনকি এর ফলে মৃত্যুও হতে পারে। পালমোনারি এমবলিজমের ফলে হৃৎপিণ্ড ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। রোগটি জীবননাশী হয়ে উঠবে কীনা, তা জমাট বাঁধা রক্তের পরিমাণের উপর নির্ভরশীল। 

হেলথ টিপস্‌

পালমোনারি এমবলিজমের প্রাথমিক পর্যায়ে ঘরোয়া কোনো চিকিৎসা পদ্ধতি প্রয়োগ করা উচিৎ নয়। তবে ভবিষ্যতে রক্ত জমাট বাঁধা বন্ধ করা এবং রক্ত জমাট বাঁধার কারণে সৃষ্ট ডিপ ভেইন থ্রম্বোসিস রোধ করা গুরুত্বপূর্ণ। কারণ এর ফলে বারবার পারমোনারি এমবোলিজম হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
ডিপ ভেইন থ্রম্বোসিস রোধ হওয়ার ঝুঁকি রোধ করতে নিম্নলিখিত বিষয়গুলি অনুসরণ করা যেতে পারে -
  • পায়ে রক্ত চলাচল স্বাভাবিক রাখা গুরুত্বপূর্ণ। এজন্য পায়ের আঙুল উপরের দিকে এমনভাবে রাখুন যাতে পায়ের পিছনের মাংসল অংশ (ক্লেভ, calve) প্রসারিত হয়। এরপর আবার অংশটি সংকুচিত করতে হবে। এই প্রক্রিয়াটি কিছুক্ষণ ধরে বারবার চালিয়ে যেতে হবে। বিশেষত দীর্ঘ সময় ধরে বসে থাকলে ব্যায়ামটি করা প্রয়োজন, যেমন - দীর্ঘক্ষণ গাড়ি চালনা বা প্লেনে বসে থাকা।
  • অসুস্থতা বা কোনো সার্জারির পর দীর্ঘদিন বিছানায় থাকবেন না। তবে যদি বিছানা ছেড়ে ওঠা যদি অসম্ভব হয়, তাহলে পায়ে রক্ত চলাচল স্বাভাবিক রাখতে প্রতি ঘন্টায় উপরে উল্লিখিত ব্যায়ামটি করুন।
  • ধূমপান ত্যাগ করুন।
  • আপনার পায়ে ডিপ ভেইন থ্রম্বোসিস হওয়ার ঝুঁকি থাকলে পায়ে চাপ সৃষ্টি করতে পারে এমন মোজা ব্যবহার করুন।
  • eHealth,Health,HealthCare, Health Care

Popular posts from this blog

Anxiety and panic attacks

Fever

Raynaud's disease